গ্রিসে নির্ভয়ে ড্রাইভিং: যে গোপন কৌশলগুলো আপনাকে অর্থ ও সময় বাঁচাবে

webmaster

A modern car navigating a narrow, bustling street in a vibrant Greek city, like Athens or Thessaloniki. Traditional stone buildings with charming details line the street, showcasing the blend of ancient architecture and contemporary urban life. Glimpses of a smart traffic management system are visible. The focus is on the dynamic urban landscape. The driver, an adult, is fully clothed in modest, appropriate attire, hands on the steering wheel in a natural pose. The image captures professional photography, high resolution, perfect anatomy, correct proportions, natural body proportions, well-formed hands, proper finger count, safe for work, appropriate content, fully clothed, professional, family-friendly.

গ্রীস, যেখানে প্রাচীন ইতিহাস আর আধুনিকতার মিশেল আপনাকে মুগ্ধ করবে। ভূমধ্যসাগরের তীরে নিজের গাড়িতে ঘুরে বেড়ানোর স্বপ্নটা অনেকেরই থাকে, আর আমি নিজে গ্রীসের রাস্তায় গাড়ি চালিয়ে দেখেছি, অভিজ্ঞতাটা একদিকে যেমন রোমাঞ্চকর, তেমনই আবার কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আগে থেকে জেনে রাখা অত্যন্ত জরুরি। এখানকার সরু গলি, অপ্রত্যাশিত বাঁক, আর স্থানীয় চালকদের আলাদা ধরন—সবকিছুতেই একটা নতুনত্ব আছে। সম্প্রতি স্মার্ট সিটি ধারণা এবং আধুনিক ট্র্যাফিক ব্যবস্থার উপর যে জোর দেওয়া হচ্ছে, তাতে ভবিষ্যতে গ্রীসের ড্রাইভিং অভিজ্ঞতাতেও বেশ কিছু পরিবর্তন আসতে পারে, যা আপনার ভ্রমণের আগে জেনে রাখা বুদ্ধিমানের কাজ। তাই, আপনার গ্রীস ভ্রমণকে আরও নিরাপদ ও আনন্দময় করে তুলতে ঠিক কী কী বিষয়ে মনোযোগ দিতে হবে, তা আমরা নির্ভুলভাবে জানতে চলেছি।

গ্রীস, যেখানে প্রাচীন ইতিহাস আর আধুনিকতার মিশেল আপনাকে মুগ্ধ করবে। ভূমধ্যসাগরের তীরে নিজের গাড়িতে ঘুরে বেড়ানোর স্বপ্নটা অনেকেরই থাকে, আর আমি নিজে গ্রীসের রাস্তায় গাড়ি চালিয়ে দেখেছি, অভিজ্ঞতাটা একদিকে যেমন রোমাঞ্চকর, তেমনই আবার কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আগে থেকে জেনে রাখা অত্যন্ত জরুরি। এখানকার সরু গলি, অপ্রত্যাশিত বাঁক, আর স্থানীয় চালকদের আলাদা ধরন—সবকিছুতেই একটা নতুনত্ব আছে। সম্প্রতি স্মার্ট সিটি ধারণা এবং আধুনিক ট্র্যাফিক ব্যবস্থার উপর যে জোর দেওয়া হচ্ছে, তাতে ভবিষ্যতে গ্রীসের ড্রাইভিং অভিজ্ঞতাতেও বেশ কিছু পরিবর্তন আসতে পারে, যা আপনার ভ্রমণের আগে জেনে রাখা বুদ্ধিমানের কাজ। তাই, আপনার গ্রীস ভ্রমণকে আরও নিরাপদ ও আনন্দময় করে তুলতে ঠিক কী কী বিষয়ে মনোযোগ দিতে হবে, তা আমরা নির্ভুলভাবে জানতে চলেছি।

সড়ক যাত্রার জন্য গাড়ির প্রস্তুতি ও প্রয়োজনীয় নথি

শলগ - 이미지 1

গ্রীসে গাড়ি চালানোর আগে সবার আগে যে জিনিসটা মাথায় আসে, তা হলো আপনার গাড়ির কাগজপত্র এবং আপনার ড্রাইভিং লাইসেন্স। আমি যখন প্রথম গ্রীসে গিয়েছিলাম, তখন ভেবেছিলাম হয়তো শুধু ইন্টারন্যাশনাল ড্রাইভিং পারমিট (IDP) থাকলেই হবে, কিন্তু পরে বুঝতে পারলাম আসল লাইসেন্সও সাথে রাখা কতটা জরুরি। গ্রীসে ট্রাফিক পুলিশ বেশ সক্রিয়, এবং তারা যে কোনো সময় আপনার কাগজপত্র দেখতে চাইতে পারে। আমার একবার এক সরু রাস্তায় পুলিশ চেকপয়েন্টে আটকেছিল, যদিও সব কাগজপত্র ঠিক ছিল, তবুও কিছুটা উদ্বেগ তো ছিলোই!

তাই, আপনার দেশীয় ড্রাইভিং লাইসেন্স, ইন্টারন্যাশনাল ড্রাইভিং পারমিট, গাড়ির রেজিস্ট্রেশন পেপার (যদি নিজের গাড়ি নিয়ে যান বা ভাড়ার গাড়ির ক্ষেত্রে চুক্তিপত্র), এবং গাড়ির ইন্স্যুরেন্সের কাগজ অবশ্যই সাথে রাখবেন। এই জিনিসগুলো হাতের কাছে রাখা শুধু আইনগত বাধ্যবাধকতাই নয়, আপনার নিজের মানসিক শান্তির জন্যও অপরিহার্য। এর সাথে গাড়ির সাধারণ কিছু বিষয়, যেমন টায়ারের চাপ, ব্রেক ফ্লুইড, এবং লাইট ঠিক আছে কিনা, সেগুলোও একবার দেখে নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ। আমার অভিজ্ঞতা বলে, ছোটখাটো এই প্রস্তুতিগুলো অনেক বড় ভোগান্তি থেকে বাঁচিয়ে দেয়।

১. ইন্টারন্যাশনাল ড্রাইভিং পারমিট (IDP) এর গুরুত্ব

ইন্টারন্যাশনাল ড্রাইভিং পারমিট, যাকে আমরা সংক্ষেপে IDP বলি, গ্রীসে আপনার গাড়ি চালানোর জন্য এটি প্রায় বাধ্যতামূলক। যদিও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য দেশগুলোর ড্রাইভিং লাইসেন্স গ্রীসে বৈধ, তবুও বাংলাদেশ বা ভারতের মতো দেশ থেকে যারা যাচ্ছেন, তাদের জন্য IDP অপরিহার্য। এটি আপনার দেশীয় লাইসেন্সের একটি বহুভাষিক অনুবাদ মাত্র, যা বিদেশি কর্তৃপক্ষকে আপনার ড্রাইভিং সক্ষমতা সম্পর্কে একটি সুস্পষ্ট ধারণা দেয়। আমার মনে আছে, একবার অ্যাথেন্স থেকে ডেলফি যাওয়ার পথে এক পুলিশ অফিসার আমার দেশীয় লাইসেন্স বুঝতে না পেরে IDP দেখতে চাইলেন, তখনই এর গুরুত্ব আমি হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছিলাম। এটি সাধারণত এক বছরের জন্য বৈধ থাকে, তাই আপনার ভ্রমণের সময়কালের সাথে এর মেয়াদ মিলিয়ে নেবেন। গ্রীসের আইন বেশ কঠোর, এবং IDP ছাড়া গাড়ি চালালে বড় অঙ্কের জরিমানা হতে পারে, এমনকি আপনার ভ্রমণ পরিকল্পনাও ভেস্তে যেতে পারে। তাই, দেশ ছাড়ার আগে অবশ্যই আপনার স্থানীয় কর্তৃপক্ষ থেকে এটি সংগ্রহ করে নিন।

২. গাড়ির বীমা ও দুর্ঘটনার ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা

গ্রীসে গাড়ি চালানোর সময় গাড়ির বীমা থাকাটা শুধু আইনগত বাধ্যবাধকতাই নয়, আপনার নিরাপত্তার জন্যও অপরিহার্য। এখানকার রাস্তায় অপ্রত্যাশিত কিছু ঘটলে, যেমন ছোটখাটো সংঘর্ষ বা গাড়ির ক্ষয়ক্ষতি, তখন বীমা আপনার ত্রাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। আমি একবার ক্রেটে গাড়ি চালাচ্ছিলাম, সরু রাস্তায় ভুলবশত একটি গাড়ির আয়নায় ধাক্কা লেগে গিয়েছিল। সৌভাগ্যবশত, আমার গাড়ির পুরো বীমা করা ছিল, তাই মেরামতের খরচ নিয়ে আমাকে কোনো চিন্তা করতে হয়নি। ভাড়ার গাড়ি নিলে সাধারণত বেসিক থার্ড-পার্টি ইন্স্যুরেন্স অন্তর্ভুক্ত থাকে, তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে সবসময় ‘ফুল কভারেজ’ বীমা নেওয়ার পরামর্শ দিই। এতে মানসিক চাপ অনেকটাই কমে যায়, কারণ গ্রীসের ট্র্যাফিক অনেক সময় বেশ ঘন এবং স্থানীয় চালকরা কিছুটা দ্রুত গতিতে গাড়ি চালায়। বীমার কাগজপত্র এবং জরুরি যোগাযোগের নম্বর সবসময় গাড়ির ড্যাশবোর্ডে বা আপনার হাতের কাছে রাখবেন, যাতে প্রয়োজনের সময় দ্রুত ব্যবহার করতে পারেন।

গ্রীক সড়ক ব্যবস্থা ও ট্র্যাফিকের বিশেষ প্রবণতা

গ্রীসের সড়ক ব্যবস্থা বেশ বৈচিত্র্যময়। আধুনিক হাইওয়ে যেমন আছে, তেমনি প্রত্যন্ত অঞ্চলে সরু, আঁকাবাঁকা পাহাড়ি রাস্তাও দেখা যায়। আমার প্রথম গ্রীস ট্রিপে, গ্রীসের হাইওয়েগুলো দেখে আমি মুগ্ধ হয়েছিলাম—মসৃণ এবং ভালো রক্ষণাবেক্ষণ করা। কিন্তু যখনই অ্যাথেন্সের ব্যস্ত শহর কেন্দ্রে বা ছোট গ্রামগুলোর সরু গলিতে ঢুকেছিলাম, তখন ড্রাইভিংয়ের চ্যালেঞ্জগুলো অনুভব করতে পারলাম। গ্রীক চালকদের ড্রাইভিং স্টাইলও বেশ আলাদা; তারা একটু দ্রুতগতিতে গাড়ি চালায় এবং অনেক সময় সিগন্যাল বা নির্দেশনার তোয়াক্কা করে না। এটা আমাকে প্রথম দিকে বেশ অবাক করেছিল, বিশেষ করে রাউন্ডঅ্যাবাউটে প্রবেশের ক্ষেত্রে তাদের নিজস্ব কিছু নিয়ম থাকে যা প্রথমে আপনার কাছে অদ্ভুত মনে হতে পারে। ধৈর্যের সাথে এবং সতর্কতার সাথে গাড়ি চালানো এখানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমি একবার থেসালোনিকি শহরে একটি গোলচত্বরে কিছুটা বিভ্রান্ত হয়ে পড়েছিলাম, কিন্তু ধীরে ধীরে গ্রীক ট্র্যাফিকের গতিপ্রকৃতি আমার কাছে অনেকটাই পরিষ্কার হয়ে যায়।

১. গ্রীসের টোল রোড ও হাইওয়ে ব্যবহার

গ্রীসে বেশ কিছু আধুনিক হাইওয়ে রয়েছে, যা দেশটির প্রধান শহরগুলোকে সংযুক্ত করে। এথেন্স-থেসালোনিকি বা এথেন্স-পাট্রাসের মতো রুটে গাড়ি চালাতে হলে আপনাকে টোল দিতে হবে। আমি যখন এথেন্স থেকে ক্যাসান্দ্রা যাচ্ছিলাম, তখন কয়েকবার টোল প্লাজা অতিক্রম করেছিলাম। টোল প্লাজাগুলোতে সাধারণত ক্যাশ এবং কার্ড পেমেন্টের ব্যবস্থা থাকে, তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে শুধুমাত্র ইলেকট্রনিক টোল সিস্টেম (যেমন e-Pass) ব্যবহৃত হয়, যা বিদেশি পর্যটকদের জন্য কিছুটা সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। তাই, হাতে কিছু খুচরো ইউরো রাখা বুদ্ধিমানের কাজ। টোল রোডের সুবিধা হলো, এগুলো বেশ ভালো মানের এবং গতিসীমা সাধারণত বেশি থাকে, যা আপনার ভ্রমণের সময়কে অনেকটাই কমিয়ে দেয়। তবে, টোল খরচ অনেক সময় কিছুটা বেশি মনে হতে পারে, তাই ভ্রমণের বাজেট করার সময় এই বিষয়টি মাথায় রাখবেন। টোল গেটে সাধারণত একাধিক লেন থাকে, সঠিক লেন বেছে নিতে প্রথমে একটু সতর্ক থাকা উচিত।

২. শহর ও গ্রামীণ এলাকার ড্রাইভিং পার্থক্য

গ্রীসের বড় শহরগুলোতে, যেমন এথেন্স বা থেসালোনিকি, ড্রাইভিং বেশ চ্যালেঞ্জিং হতে পারে। এখানে ট্র্যাফিক জ্যাম, সরু রাস্তা, এবং সীমিত পার্কিং স্থান আপনার ধৈর্যের পরীক্ষা নিতে পারে। আমি একবার এথেন্সের প্ল্যাকাতে হারিয়ে গিয়েছিলাম এবং বুঝতে পারছিলাম না কোথায় পার্ক করব। অন্যদিকে, গ্রামীণ এলাকায় ড্রাইভিং অভিজ্ঞতা সম্পূর্ণ ভিন্ন। এখানকার রাস্তাগুলো প্রায়শই পাহাড়ি এবং আঁকাবাঁকা, কিন্তু ট্র্যাফিক অনেক কম থাকে এবং চারপাশের প্রাকৃতিক দৃশ্য আপনাকে মুগ্ধ করবে। গ্রামগুলোতে পথনির্দেশনাও কম থাকে, তাই জিপিএস বা ভালো একটি মানচিত্র থাকা অপরিহার্য। আমার মনে আছে, অলিম্পিয়ার দিকে যেতে গিয়ে এক গ্রামে আমি একটি সরু রাস্তায় ঢুকে পড়েছিলাম, যেখানে একটিমাত্র গাড়ি যেতে পারতো। শহর এবং গ্রামের এই পার্থক্যগুলো মাথায় রেখে আপনার ড্রাইভিং পরিকল্পনা করা উচিত। শহরের কোলাহল থেকে মুক্তি পেতে গ্রামীণ অঞ্চলের রাস্তাগুলো অনেক বেশি উপভোগ্য।

নেভিগেশন ব্যবস্থা ও স্থানীয় পথের অভিজ্ঞতা

আধুনিক যুগে জিপিএস নেভিগেশন ছাড়া গ্রীসে গাড়ি চালানো প্রায় অসম্ভব। গুগল ম্যাপস বা ওয়েজের মতো অ্যাপ্লিকেশনগুলো এখানে খুবই সহায়ক। আমি ব্যক্তিগতভাবে গুগল ম্যাপস ব্যবহার করি এবং দেখেছি এটি বেশিরভাগ সময়ই সঠিক দিকনির্দেশনা দেয়। তবে, প্রত্যন্ত অঞ্চলে বা পাহাড়ি এলাকায় অনেক সময় মোবাইল নেটওয়ার্ক দুর্বল হতে পারে, তাই অফলাইন ম্যাপ ডাউনলোড করে রাখা একটি চমৎকার বুদ্ধি। আমার একবার এমন হয়েছিল যে, সিফনোস দ্বীপের একটি প্রত্যন্ত গ্রামে ইন্টারনেট সংযোগ হারিয়ে গিয়েছিল, তখন অফলাইন ম্যাপই আমাকে সঠিক পথে ফিরিয়ে এনেছিল। স্থানীয় সাইনেজ বা দিকনির্দেশনা বোর্ডগুলো সাধারণত গ্রীক এবং ইংরেজিতে লেখা থাকে, যা বিদেশিদের জন্য অনেকটাই সুবিধাজনক। কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে শুধুমাত্র গ্রীক বর্ণমালা দেখতে পাবেন, তখন কিছুটা ধাঁধায় পড়ে যেতে পারেন। স্থানীয়দের সাহায্য চাওয়া সবসময়ই একটি ভালো বিকল্প, কারণ তারা তাদের এলাকার রাস্তাঘাট সম্পর্কে সবচেয়ে ভালো জানে।

১. জিপিএস এবং স্মার্টফোন অ্যাপ্লিকেশনের ব্যবহার

জিপিএস নেভিগেশন গ্রীসে ড্রাইভিংয়ের জন্য অপরিহার্য একটি টুল। গুগল ম্যাপস, ওয়েজ (Waze), বা অ্যাপল ম্যাপস – যে কোনো একটি অ্যাপ আপনার স্মার্টফোনে ডাউনলোড করে রাখা উচিত। আমি নিজে গুগল ম্যাপসের উপর অনেক বেশি নির্ভর করি কারণ এটি রিয়েল-টাইম ট্র্যাফিক আপডেট দেয় এবং বিভিন্ন বিকল্প রুটের পরামর্শও দেয়। একবার আমার এক বন্ধু ভুল করে এমন একটি রাস্তায় ঢুকে পড়েছিল যেটি আসলে শুধুমাত্র স্থানীয়দের জন্য ছিল, কিন্তু গুগল ম্যাপস তাকে দ্রুত বিকল্প পথ দেখিয়েছিল। তবে, এই অ্যাপসগুলি ব্যবহারের সময় খেয়াল রাখবেন যেন আপনার ফোনের চার্জ পর্যাপ্ত থাকে, কারণ দীর্ঘ সময় জিপিএস ব্যবহার করলে ব্যাটারি দ্রুত শেষ হয়ে যেতে পারে। একটি পোর্টেবল চার্জার বা গাড়ির চার্জার সাথে রাখা খুব জরুরি। এছাড়াও, ভ্রমণের আগে আপনার গন্তব্যের আশেপাশে কী কী দেখার মতো জায়গা আছে, তা জিপিএসে আগে থেকেই মার্ক করে রাখলে সময় বাঁচে।

২. গ্রীসের অপ্রত্যাশিত বাঁক ও সরু রাস্তা

গ্রীসের অনেক রাস্তা বিশেষ করে দ্বীপগুলো বা পাহাড়ি অঞ্চলগুলোতে অপ্রত্যাশিত বাঁক এবং সরু পথ দেখা যায়। আমি যখন স্যান্টোরিনিতে গাড়ি চালাচ্ছিলাম, তখন সেখানকার রাস্তাগুলো দেখে প্রথমে কিছুটা ভয় পেয়েছিলাম—খুবই সরু আর দুই দিক থেকে গাড়ি আসতে পারে এমন রাস্তায় বিপরীতমুখী গাড়ির সাথে মুখোমুখি হওয়াটা বেশ চ্যালেঞ্জিং ছিল। এমনকি কিছু রাস্তায় এমন বাঁক থাকে যেখানে সামনের দিক থেকে আসা গাড়ি দেখা যায় না, তাই হর্ন বাজিয়ে বাঁক নেওয়া একটি সাধারণ অভ্যাস। আমার পরামর্শ হলো, এইসব রাস্তায় অতিরিক্ত সতর্কতার সাথে ধীরে গাড়ি চালান, বিশেষ করে রাতে। স্থানীয় চালকরা এই বিষয়ে অভিজ্ঞ হলেও, পর্যটকদের জন্য এটি নতুন অভিজ্ঞতা হতে পারে। রাস্তা সংকেতগুলোর দিকে মনোযোগ দিন এবং প্রয়োজনে অন্য গাড়িকে পাশ কাটাতে দিন। অনেক সময় স্থানীয়রা আপনাকে পথ দেখিয়ে সাহায্য করতে পারে, তাদের সিগন্যালগুলো লক্ষ্য করুন।

পার্কিং ব্যবস্থা ও শহরের নিয়মকানুন

গ্রীসের বড় শহরগুলোতে পার্কিং খুঁজে পাওয়া একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এথেন্স, থেসালোনিকি বা গ্রীসের অন্যান্য জনবহুল এলাকায় পার্কিং স্পেস খুব সীমিত এবং প্রায়শই দামি। আমি যখন এথেন্সের কেন্দ্রস্থলে গিয়েছিলাম, তখন একটি পার্কিং স্পট খুঁজে পেতে প্রায় ৪০ মিনিট সময় লেগেছিল, এবং সেটার খরচও ছিল বেশ চড়া। শহরের কেন্দ্রগুলোতে সাধারণত পে-পার্কিং জোন থাকে, যেখানে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য অর্থ পরিশোধ করে গাড়ি রাখা যায়। নীল রঙের লাইন বা চিহ্ন পার্কিংয়ের জন্য নির্দেশ করে, তবে কিছু এলাকায় স্থানীয়দের জন্য সংরক্ষিত পার্কিং স্পটও থাকে, যেখানে পর্যটকদের গাড়ি পার্ক করা নিষিদ্ধ। গ্রামের দিকে বা ছোট শহরে পার্কিং তুলনামূলকভাবে সহজলভ্য এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বিনামূল্যে।

১. শহুরে পার্কিংয়ের চ্যালেঞ্জ ও সমাধান

শহুরে এলাকায় পার্কিং সত্যিই একটি মাথাব্যথা। আমার পরামর্শ হলো, শহরের কেন্দ্রে গাড়ি নিয়ে ঢোকার আগে পার্কিং গ্যারেজ বা পাবলিক পার্কিং স্পটগুলো চিহ্নিত করে রাখুন। এথেন্সের মতো শহরে অনেক আন্ডারগ্রাউন্ড পার্কিং রয়েছে যা কিছুটা ব্যয়বহুল হলেও আপনার গাড়ির নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। স্মার্টফোন অ্যাপস যেমন ‘Parkopedia’ বা স্থানীয় পার্কিং অ্যাপসগুলো আপনাকে খালি পার্কিং স্পট খুঁজে পেতে সাহায্য করতে পারে। আমার মনে আছে, একবার আমি থেসালোনিকিতে পার্কিং খুঁজছিলাম এবং একটি অ্যাপ ব্যবহার করে সহজে একটি খালি গ্যারেজ খুঁজে পেয়েছিলাম, যা আমার সময় বাঁচিয়েছিল। রাস্তার ধারে পার্কিংয়ের ক্ষেত্রে সাইনেজ ভালোভাবে দেখে নেবেন। নিষিদ্ধ স্থানে পার্ক করলে আপনার গাড়িতে ফাইন লাগানো হতে পারে বা এমনকি গাড়ি টেনে নিয়ে যাওয়া হতে পারে, যা আপনার ভ্রমণের আনন্দ মাটি করে দেবে।

২. গ্রীসের ট্র্যাফিক আইন ও জরিমানা

গ্রীসের ট্র্যাফিক আইন বেশ কঠোর এবং জরিমানা বেশ মোটা অঙ্কের। গতিসীমা লঙ্ঘন, রেড লাইট অমান্য করা, মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালানো, বা সিটবেল্ট না পরার মতো অপরাধগুলোর জন্য কঠোর শাস্তি রয়েছে। আমি একবার অতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চালানোর জন্য অল্পের জন্য জরিমানা থেকে বেঁচে গিয়েছিলাম, কিন্তু অভিজ্ঞতাটা বেশ ভয়ের ছিল। শিশুদের জন্য কার সিট ব্যবহার করা বাধ্যতামূলক, এবং এটি আপনার ভাড়া করা গাড়িতে আছে কিনা, তা নিশ্চিত করে নেবেন। গ্রীসে ড্রাইভিং করার সময়, গাড়ির ফোকাস এবং হেডলাইট ব্যবহার সম্পর্কে স্থানীয় নিয়মগুলো জেনে রাখা ভালো। কিছু সুনির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে যা অন্য দেশ থেকে ভিন্ন হতে পারে।

আইন লঙ্ঘন সম্ভাব্য জরিমানা (ইউরোতে) গুরুত্বপূর্ণ দিক
গতিসীমা লঙ্ঘন ৫০ – ৭০০ সড়কের ধরন ও গতির ওপর নির্ভর করে
মদ্যপ অবস্থায় ড্রাইভিং ২০০ – ৭০০ + লাইসেন্স সাসপেনশন রক্তে অ্যালকোহলের মাত্রা অনুযায়ী শাস্তি ভিন্ন হয়
সিটবেল্ট না পরা ৮০ চালক ও যাত্রীর জন্য প্রযোজ্য
মোবাইল ফোন ব্যবহার ১০০ হাতে ধরে ফোন ব্যবহার করা নিষেধ
নিষিদ্ধ স্থানে পার্কিং ৪০ – ৮০ + গাড়ি টেনে নেওয়া পার্কিং সাইনেজ ভালোভাবে লক্ষ্য করুন

নিরাপত্তা টিপস ও জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলা

গ্রীসে গাড়ি চালানোর সময় নিরাপত্তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্থানীয় চালকরা কিছুটা আক্রমণাত্মক হতে পারে, বিশেষ করে শহরের ব্যস্ত রাস্তাগুলোতে। তাই, সর্বদা সতর্ক থাকুন এবং আত্মরক্ষামূলক ড্রাইভিং অনুশীলন করুন। আমি নিজে দেখেছি, কিছু চালক হঠাৎ করে লেন পরিবর্তন করে বা পাশ কাটিয়ে চলে যায়, তাই আয়নায় চোখ রাখা খুব জরুরি। জরুরি পরিস্থিতিতে কী করতে হবে, তা আগে থেকে জেনে রাখা আপনার জন্য অনেক সহায়ক হবে। আমার একবার গাড়িতে টায়ার পাংচার হয়েছিল এবং ভাগ্যক্রমে স্পেয়ার টায়ার ছিল, তবে কীভাবে এটি পরিবর্তন করতে হয় তা জানা ছিল একটি বড় স্বস্তি। আপনার ভাড়া করা গাড়ির জরুরি ব্রেকথ্রু কিট (যেমন ফার্স্ট এইড বক্স, ফ্লেয়ার, রেফ্লেক্টিভ ভেস্ট) আছে কিনা, তা নিশ্চিত করে নিন।

১. গ্রীসের সড়ক দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে করণীয়

দুর্ভাগ্যবশত যদি গ্রীসে আপনার কোনো সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে, তাহলে শান্ত থাকাটা সবচেয়ে জরুরি। প্রথমে, আপনার এবং আপনার সাথে থাকা ব্যক্তিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন। যদি সম্ভব হয়, গাড়ি নিরাপদ স্থানে নিয়ে যান এবং ট্র্যাফিকের জন্য সতর্ক সংকেত ব্যবহার করুন। আমি একবার একটি ছোটখাটো দুর্ঘটনার শিকার হয়েছিলাম, এবং প্রথমেই পুলিশকে খবর দিয়েছিলাম। গ্রীসে, দুর্ঘটনার খবর পুলিশকে জানানো বাধ্যতামূলক, বিশেষ করে যদি অন্য কোনো গাড়ির সাথে জড়িত থাকে বা কেউ আহত হয়। আপনার বীমা কোম্পানির হেল্পলাইন নম্বরেও যোগাযোগ করুন। দুর্ঘটনাস্থলের ছবি তোলা এবং অন্যান্য জড়িত পক্ষের তথ্য (যেমন লাইসেন্স নম্বর, বীমা তথ্য) সংগ্রহ করাও গুরুত্বপূর্ণ। পুলিশ রিপোর্ট এবং বীমা দাবি প্রক্রিয়ার জন্য এই তথ্যগুলো অপরিহার্য।

২. রাতের ড্রাইভিং ও পাহাড়ি পথের সতর্কতা

গ্রীসের রাতের বেলা ড্রাইভিং অভিজ্ঞতা দিনের বেলায় ড্রাইভিং থেকে অনেকটাই ভিন্ন। বিশেষ করে পাহাড়ি রাস্তাগুলোতে রাতের বেলা দৃশ্যমানতা কমে যায় এবং অপ্রত্যাশিত বাঁকগুলো আরও বিপজ্জনক মনে হয়। আমি একবার মেটেওরা থেকে ফেরার পথে রাতে গাড়ি চালাচ্ছিলাম, এবং তখন কুয়াশার কারণে দৃশ্যমানতা এতটাই কমে গিয়েছিল যে খুব ধীরে গাড়ি চালাতে হয়েছিল। রাতের বেলা সবসময় হাই বিম লাইট ব্যবহার করুন, যদি সামনের দিক থেকে কোনো গাড়ি না আসে। গ্রীসের গ্রামীণ এলাকায় অনেক সময় আলোর ব্যবস্থা অপ্রতুল থাকে এবং বন্যপ্রাণী (যেমন ছাগল বা ভেড়া) হঠাৎ করে রাস্তায় চলে আসতে পারে। তাই, বাড়তি সতর্কতার সাথে এবং ধীরে গাড়ি চালান। আপনার গাড়ির হেডলাইটগুলো সঠিক অ্যাঙ্গেল আছে কিনা, সেটাও পরীক্ষা করে নেবেন।

গ্রীসে ড্রাইভিংয়ের অর্থনৈতিক দিক ও খরচ পরিকল্পনা

গ্রীসে গাড়ি ভাড়া করা বা ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে যাওয়ার আগে খরচ সম্পর্কে একটা স্পষ্ট ধারণা থাকা উচিত। গাড়ির ভাড়া, জ্বালানি খরচ, টোল ফি এবং পার্কিং খরচ—সবকিছুই আপনার মোট ভ্রমণের বাজেটে প্রভাব ফেলবে। আমি যখন গ্রীসে প্রথমবার গাড়ি ভাড়া করেছিলাম, তখন বেশ কিছু ভাড়ার অপশন দেখেছিলাম, এবং একটি ভালো ডিল পেতে বেশ সময় লেগেছিল। ছোট গাড়ি ভাড়া করলে সাধারণত জ্বালানি খরচ কম হয়, যা দীর্ঘ রোড ট্রিপের জন্য ভালো। জ্বালানির দাম ইউরোপের অন্যান্য দেশের মতোই, তবে দূরত্বের সাথে সাথে এই খরচ অনেকটাই বেড়ে যেতে পারে।

১. গাড়ি ভাড়া ও জ্বালানি খরচ

গ্রীসে গাড়ি ভাড়ার খরচ গাড়ির ধরন, সিজন এবং ভাড়ার মেয়াদ অনুসারে পরিবর্তিত হয়। পিক সিজনে (জুলাই-আগস্ট) গাড়ির ভাড়া অনেকটাই বেড়ে যায়। আমি ব্যক্তিগতভাবে অফ-সিজনে (যেমন মে বা সেপ্টেম্বর) গ্রীস ভ্রমণ পছন্দ করি, কারণ তখন গাড়ির ভাড়াও কম থাকে এবং পর্যটকদের ভিড়ও কম থাকে। ছোট আকারের গাড়ি যেমন হ্যাচব্যাক বা ছোট সেডান সাধারণত সবচেয়ে সাশ্রয়ী হয়। জ্বালানির দাম গ্রীসে লিটার প্রতি প্রায় ১.৮০ থেকে ২.২০ ইউরোর মধ্যে থাকতে পারে, যা বিশ্বের অনেক দেশের চেয়ে বেশি। তাই, দূরপাল্লার ভ্রমণের জন্য জ্বালানি খরচ একটি বড় ফ্যাক্টর হতে পারে। আপনার ভাড়া করা গাড়ি পেট্রোল না ডিজেল চালিত, সেদিকেও খেয়াল রাখবেন।

২. অপ্রত্যাশিত খরচ ও বাজেট ব্যবস্থাপনা

গাড়ি নিয়ে ভ্রমণ করার সময় অপ্রত্যাশিত খরচ প্রায়শই এসে পড়ে। যেমন, গাড়ির কোনো ছোটখাটো ক্ষতি, টায়ার পাংচার বা অনাকাঙ্ক্ষিত জরিমানা। আমার একবার টায়ার পাংচার হওয়ার কারণে সারানোর খরচ লেগেছিল, যা আমার বাজেটের বাইরে ছিল। এর সাথে রাস্তার পাশে ছোটখাটো বিরতি নেওয়া বা স্থানীয় স্ন্যাকসের জন্য খরচগুলো যোগ হয়। একটি ভালো বাজেট পরিকল্পনা করে ভ্রমণ করা উচিত, যেখানে অপ্রত্যাশিত খরচগুলোর জন্য একটি অতিরিক্ত তহবিল রাখা যায়। গ্রীসের ক্যাশলেস পেমেন্ট ব্যবস্থা বেশ উন্নত, তবে প্রত্যন্ত অঞ্চলে কিছু দোকানে বা ক্যাফেতে নগদ অর্থের প্রয়োজন হতে পারে, তাই কিছু নগদ ইউরো সাথে রাখা বুদ্ধিমানের কাজ।

গ্রীসের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগের জন্য রোড ট্রিপ

গ্রীসের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং ঐতিহাসিক স্থানগুলো রোড ট্রিপের জন্য অসাধারণ। গাড়ি নিয়ে ভ্রমণ করলে আপনি নিজের ইচ্ছামতো যেকোনো জায়গায় থামতে পারবেন, ছবি তুলতে পারবেন এবং লুকানো রত্নগুলো আবিষ্কার করতে পারবেন, যা পাবলিক ট্রান্সপোর্টে সম্ভব নয়। আমি যখন মানি উপদ্বীপে গাড়ি চালিয়েছিলাম, তখন সেখানকার নির্জন সৈকত এবং ঐতিহ্যবাহী গ্রামগুলো এতটাই মুগ্ধ করেছিল যে আমি প্রায় ভুলে গিয়েছিলাম যে আমি ড্রাইভিং করছি। রোড ট্রিপের সময় আপনার ভ্রমণের গতিবিধি পরিকল্পনা করা উচিত, যাতে প্রতিটি স্থান ভালোভাবে উপভোগ করতে পারেন।

১. দ্বীপপুঞ্জ ও গ্রামীণ অঞ্চলের অন্বেষণ

গ্রীসের দ্বীপগুলো গাড়ি নিয়ে অন্বেষণ করা একটি অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতা। স্যান্টোরিনি, ক্রেট বা রোডসের মতো দ্বীপগুলোতে গাড়ি ভাড়া করে ঘুরলে আপনি তাদের লুকানো সৈকত, ছোট ছোট গ্রাম এবং ঐতিহাসিক স্থানগুলো আবিষ্কার করতে পারবেন। আমি ক্রেটে গাড়ি চালিয়ে সেখানকার লেবানন পর্বতমালায় গিয়েছিলাম এবং সেখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আমাকে বিমোহিত করেছিল। গ্রামীণ অঞ্চলের রাস্তাগুলো অনেক সময় কিছুটা দুর্গম হতে পারে, কিন্তু সেই অঞ্চলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং শান্ত পরিবেশ আপনাকে মন্ত্রমুগ্ধ করবে। প্রত্যন্ত অঞ্চলের লোকাল রেস্টুরেন্টগুলোতে স্থানীয় খাবার চেখে দেখা একটি চমৎকার অভিজ্ঞতা হতে পারে।

২. ঐতিহাসিক স্থান ও প্রাকৃতিক দৃশ্যের অভিজ্ঞতা

গ্রীস তার প্রাচীন ইতিহাস এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য বিখ্যাত। অলিম্পিয়া, ডেলফি বা মেটেওরার মতো ঐতিহাসিক স্থানগুলো গাড়ি নিয়ে ঘুরে দেখলে আপনার ভ্রমণের অভিজ্ঞতা আরও গভীর হবে। আমি যখন ডেলফিতে গিয়েছিলাম, তখন মনে হচ্ছিল আমি প্রাচীন গ্রীসের ইতিহাসের সাথে একাত্ম হয়ে গেছি। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যেমন ভিওসের পর্বতমালা বা থার্মোপিলির ঐতিহাসিক পাসও গাড়ি নিয়ে অন্বেষণ করা যায়। অনেক সময় এমন কিছু স্থানে যাওয়ার জন্য গাড়িই একমাত্র উপায়। প্রতিটি ঐতিহাসিক স্থানের প্রবেশ মূল্য এবং খোলার সময় আগে থেকে জেনে রাখা বুদ্ধিমানের কাজ।

স্মার্ট ট্র্যাফিক ব্যবস্থা ও ভবিষ্যতের ড্রাইভিং

গ্রীসেও স্মার্ট সিটি এবং আধুনিক ট্র্যাফিক ব্যবস্থার উপর জোর দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে উন্নত ট্র্যাফিক ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম, স্মার্ট পার্কিং সলিউশন এবং এমনকি ভবিষ্যতে স্বায়ত্তশাসিত গাড়ি চালনার সম্ভাবনা। এই পরিবর্তনগুলো গ্রীসে গাড়ি চালানোর অভিজ্ঞতাকে আরও মসৃণ এবং দক্ষ করে তুলতে পারে। যদিও বর্তমানে এগুলি প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে, তবে ভবিষ্যতে এই প্রযুক্তিগুলি পর্যটকদের জন্য ড্রাইভিং অভিজ্ঞতাকে আরও সহজ করে তুলবে।

১. গ্রীসের ট্র্যাফিক ব্যবস্থাপনার আধুনিকীকরণ

গ্রীসের বড় শহরগুলোতে ট্র্যাফিক ব্যবস্থাপনার আধুনিকীকরণের কাজ চলছে। স্মার্ট ট্র্যাফিক লাইট সিস্টেম, রিয়েল-টাইম ট্র্যাফিক মনিটরিং এবং ইলেকট্রনিক টোল সংগ্রহ ব্যবস্থা এর মধ্যে অন্যতম। আমার মনে হয়, এই প্রযুক্তিগুলো ট্র্যাফিক জ্যাম কমাতে এবং শহরের মধ্যে ড্রাইভিং আরও সহজ করতে সাহায্য করবে। ভবিষ্যতে, ট্র্যাফিক সম্পর্কিত তথ্য সরাসরি আপনার গাড়ির নেভিগেশন সিস্টেমে আসতে পারে, যা আপনাকে সেরা রুট বেছে নিতে সহায়তা করবে। এই পরিবর্তনগুলো পর্যটকদের জন্য গ্রীসে ড্রাইভিং অভিজ্ঞতাকে আরও উপভোগ্য করে তুলবে।

২. ই-যানবাহন ও চার্জিং পরিকাঠামো

ইলেকট্রিক ভেহিকেল (EV) বা বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যবহার গ্রীসে ধীরে ধীরে বাড়ছে। পরিবেশ সচেতনতা বাড়ার সাথে সাথে পর্যটকরাও ই-যানবাহনের দিকে ঝুঁকছেন। বর্তমানে গ্রীসে ইভি চার্জিং স্টেশন খুব বেশি সহজলভ্য না হলেও, প্রধান শহরগুলো এবং জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে এর সংখ্যা বাড়ছে। আমি যখন শেষবার গ্রীসে গিয়েছিলাম, তখন কিছু হোটেলে ইভি চার্জিং স্টেশন দেখেছি। ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে, গ্রীস সরকার ইভি চার্জিং পরিকাঠামো উন্নয়নে কাজ করছে, যা ভবিষ্যতে বৈদ্যুতিক গাড়ি নিয়ে গ্রীসে ভ্রমণকে আরও সহজ করে তুলবে।

글কে শেষ করার সময়

গ্রীসে নিজের গাড়ি নিয়ে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা সত্যিই অসাধারণ। আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে আমি বলতে পারি, এখানকার ঐতিহাসিক নিদর্শন, অপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর বৈচিত্র্যময় সড়ক আপনাকে মুগ্ধ করবেই। তবে এই রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতাকে আরও উপভোগ্য এবং নিরাপদ করতে কিছু প্রস্তুতি ও সচেতনতা অপরিহার্য। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র থেকে শুরু করে গ্রীক ট্র্যাফিকের বিশেষ ধরন এবং পার্কিং ব্যবস্থা—সবকিছু সম্পর্কে আগে থেকে জেনে রাখা আপনাকে অনেক অপ্রত্যাশিত সমস্যা থেকে বাঁচিয়ে দেবে। আশা করি, আমার এই বিস্তারিত আলোচনা আপনার গ্রীস ভ্রমণের পরিকল্পনায় সহায়ক হবে এবং আপনি গ্রীসের সৌন্দর্য নিজের চোখে উপভোগ করার একটি অবিস্মরণীয় স্মৃতি তৈরি করতে পারবেন। নিরাপদ ভ্রমণ হোক আপনার, গ্রীসের রাস্তায়!

কয়েকটি প্রয়োজনীয় তথ্য

১. ইন্টারন্যাশনাল ড্রাইভিং পারমিট (IDP) ছাড়া গ্রীসে গাড়ি চালানো আইনত দণ্ডনীয়, তাই দেশ ছাড়ার আগেই এটি সংগ্রহ করুন।

২. ভাড়ার গাড়ির ক্ষেত্রে সবসময় ‘ফুল কভারেজ’ বীমা বেছে নিন, এতে অপ্রত্যাশিত খরচ ও মানসিক চাপ অনেকটাই কমে যায়।

৩. গ্রামীণ বা পাহাড়ি অঞ্চলে মোবাইল নেটওয়ার্ক দুর্বল হতে পারে, তাই ভ্রমণের আগে গুগল ম্যাপসের অফলাইন ভার্সন ডাউনলোড করে রাখুন।

৪. গ্রীসের ট্র্যাফিক আইন বেশ কঠোর, বিশেষ করে গতিসীমা ও মদ্যপ অবস্থায় ড্রাইভিংয়ের ক্ষেত্রে, তাই সর্বদা সতর্ক থাকুন।

৫. শহরের কেন্দ্রগুলোতে পার্কিং খুঁজে পাওয়া চ্যালেঞ্জিং এবং ব্যয়বহুল হতে পারে, তাই আগে থেকে পার্কিং গ্যারেজ চিহ্নিত করে রাখুন।

গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো এক নজরে

গ্রীসে গাড়ি চালানোর জন্য ইন্টারন্যাশনাল ড্রাইভিং পারমিট (IDP) ও সম্পূর্ণ বীমা অপরিহার্য। এখানকার সড়ক ব্যবস্থায় টোল রোড এবং শহর-গ্রামের ভিন্ন ড্রাইভিং অভিজ্ঞতা লক্ষ্য করা যায়। নেভিগেশনের জন্য জিপিএস অত্যন্ত জরুরি হলেও, অপ্রত্যাশিত বাঁক ও সরু পথের জন্য বাড়তি সতর্কতা প্রয়োজন। শহুরে পার্কিং ব্যয়বহুল ও সীমিত, তাই আগে থেকে পরিকল্পনা করুন। গ্রীসের ট্র্যাফিক আইন কঠোর, তাই আইন মেনে চলুন। অপ্রত্যাশিত দুর্ঘটনা বা জরুরি অবস্থার জন্য প্রস্তুত থাকুন। জ্বালানি খরচ এবং গাড়ি ভাড়ার বাজেট আগে থেকে নির্ধারণ করা বুদ্ধিমানের কাজ। গ্রীসের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও ঐতিহাসিক স্থানগুলো গাড়ি নিয়ে অন্বেষণ একটি অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতা দিতে পারে। ভবিষ্যতে স্মার্ট ট্র্যাফিক ব্যবস্থা গ্রীসের ড্রাইভিং অভিজ্ঞতাকে আরও সহজ করে তুলবে।

প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (FAQ) 📖

প্র: গ্রীসের রাস্তায় গাড়ি চালানোর সময় বিশেষ করে রাস্তাঘাট আর স্থানীয় চালকদের ধরন নিয়ে ঠিক কোন বিষয়গুলো আমাকে সচেতন থাকতে হবে, যা অন্যদের থেকে আলাদা?

উ: গ্রীসের সরু গলিগুলোতে আমি যখন প্রথমবার নিজের গাড়ি নিয়ে ঢুকেছিলাম, সত্যি বলছি, একটা অন্যরকম উত্তেজনা আর কিছুটা চিন্তাও কাজ করছিল! এখানকার রাস্তাগুলো শুধু সরুই নয়, বাঁকে বাঁকে এমন অপ্রত্যাশিত মোড় আসে যে, আগে থেকে সাবধান না থাকলে হঠাৎ করেই বিপদ হতে পারে। অনেক সময় পাহাড়ী রাস্তায় এমন বাঁক আসে যেখানে উল্টো দিক থেকে আসা গাড়ি দেখা যায় না, সেক্ষেত্রে স্থানীয়রা হর্ন বাজিয়ে জানান দেয়, এটা একটা শেখার বিষয়!
আর স্থানীয় চালকরা? উফফ! ওরা একটু তাড়াহুড়ো করে গাড়ি চালায়, নিজেদের লেন ছেড়ে অন্য লেনে ঢোকা বা হর্ন বাজানোর একটা নিজস্ব ধরন আছে। মনে রাখবেন, ওরা কিন্তু আপনাকে জায়গা করে দিতে তেমন অভ্যস্ত নয়। তাই সব সময় আত্মরক্ষামূলক ড্রাইভিং করতে হবে, আর একটু ধৈর্য ধরে ওদের ড্রাইভিং স্টাইলটা বুঝে নিতে হবে।

প্র: গ্রীসের ‘স্মার্ট সিটি’ ধারণা আর আধুনিক ট্র্যাফিক ব্যবস্থা সেখানকার ড্রাইভিং অভিজ্ঞতাকে ভবিষ্যতে কীভাবে প্রভাবিত করতে পারে বলে আপনার মনে হয়?

উ: স্মার্ট সিটি আর আধুনিক ট্র্যাফিক ব্যবস্থার কথা শুনলে আমার মনে হয়, ইশ! যদি এই জিনিসগুলো আমার গ্রীস ভ্রমণের সময় আরও বেশি চালু থাকত, তাহলে ড্রাইভিংটা হয়তো আরও আরামদায়ক হতো। আমার মনে হয়, ভবিষ্যতে আমরা গ্রীসে আরও নির্ভুল রিয়েল-টাইম ট্র্যাফিক আপডেট পাবো, যা জ্যাম বা রাস্তা বন্ধ থাকার সমস্যাগুলো সহজে এড়াতে সাহায্য করবে। পার্কিং-এর সমস্যাও হয়তো কমে যাবে, কারণ স্মার্ট পার্কিং সিস্টেমগুলো আপনাকে খালি জায়গা খুঁজে পেতে সাহায্য করবে। বিশেষ করে, গ্রীসের ঐতিহাসিক শহরগুলোর ভিড়ের মধ্যে দিয়ে গাড়ি চালানোর সময় নেভিগেশন সিস্টেমগুলো আরও উন্নত হলে, হারিয়ে যাওয়ার ভয়টা অনেকটাই কমে যাবে। এটা শুধু সময় বাঁচাবে না, আমাদের মতো পর্যটকদের মানসিক চাপও কমাবে।

প্র: গ্রীসে গাড়ি চালিয়ে একটা নিরাপদ আর আনন্দময় ভ্রমণের জন্য আপনি ঠিক কী কী জরুরি প্রস্তুতি বা টিপস দেবেন?

উ: গ্রীসে নিজের গাড়ি নিয়ে ঘুরতে বের হওয়ার আগে কিছু জিনিস মাথায় রাখা খুব জরুরি, যা আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে পাওয়া। প্রথমত, অবশ্যই একটি আন্তর্জাতিক ড্রাইভিং পারমিট (IDP) সঙ্গে নিন। এটা ছাড়া কিন্তু গাড়ি চালানোটা অবৈধ। আর গাড়ি বীমা নিয়ে খুব সতর্ক থাকবেন, একটা ভালো কভারেজ অবশ্যই নেবেন। গাড়িতে ওঠার আগে গুগল ম্যাপে বা অন্য কোনো নেভিগেশন অ্যাপে অফলাইন ম্যাপ ডাউনলোড করে রাখুন। গ্রীসের কিছু পাহাড়ি এলাকায় নেটওয়ার্ক দুর্বল হতে পারে। আমার তো একবার নেটওয়ার্ক না থাকায় বেশ কিছুক্ষণ পথ খুঁজতে হয়েছিল!
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, স্থানীয় ট্র্যাফিক আইনগুলো সম্পর্কে একটু ধারণা রাখা। যেমন— গতিসীমা, পার্কিং নিয়ম, এমনকি কিছু টোল রোডের জন্য নগদ টাকা সাথে রাখা। আমি একবার টোলের জন্য শুধু কার্ড নিয়ে গেছিলাম, কিন্তু মেশিন কাজ করছিল না, ফলে বেশ ঝামেলায় পড়েছিলাম। এই ছোট ছোট বিষয়গুলো জেনে রাখলে আপনার গ্রীস ভ্রমণ সত্যিই নিরাপদ এবং আনন্দময় হবে।

📚 তথ্যসূত্র